মুক্তবার্তা ডেস্ক: জেমস বলতে উন্মাদ তরুণ সমাজ। তার গিটারের টান, ঝাঁকড়া চুলের ঝাকি আর ঝাঁঝালো কণ্ঠের জাদুতে বিমোহিত দেশের লাখ লাখ তরুণ গানপ্রেমী। বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে যে কজন পপ গায়ক আছেন তাদের মধ্যে জেমস অন্যতম। জেমস, নগরবাউল বা গুরু এসব নামেই তিনি দেশব্যাপী সমান পরিচিত। জীবনের ৫২টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৫৩-তে পা দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের এই গুরু। ১৯৬৪ সালের এই দিনে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক মাহফুজ আনাম ওরফে জেমস।
প্রিয় শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে পুরো অক্টোবর জুড়ে সারা দেশে এক কোটি গাছ লাগাবেন তার ভক্তরা। জেমসের পাগলা ভক্ত খ্যাত প্রিন্স মোহাম্মদ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জেমস ফ্যান ক্লাবে এখন এক লাখ সদস্য আছে। তারা এই আয়োজনটি বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫৩টি প্রতিকৃতিও টাঙানো হয়েছে। আজ বিকালে বারিধারায় জেমসের স্টুডিওতে গিয়ে জেমস ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হবে বলেও জানান প্রিন্স।
এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ১০টি বিলবোর্ড টাঙিয়ে জেমসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ছেলে প্রিন্স। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেমসের জন্মদিনে ভিন্ন কিছুর আয়োজন করেন এই ভক্ত। গত বছরও তিনি জেমসের জন্মদিনে বিশাল এক কেক নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ঢাকা শহরের নানা জায়গায়।
জেমস বর্তমানে ‘নগরবাউল’ ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট। পূর্বে যেটি ‘ফিলিংস’ নামে পরিচিত ছিল। জেমস তার স্বতন্ত্র কণ্ঠ ও স্টাইলের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বলিউডের কিছু হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার গভীর টান থাকলেও পরিবারের সমর্থন ছিল না। গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে কিশোর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। থাকতে শুরু করেন চট্টগ্রামের একটি মেসে। ওই মেসে থাকাকালীনই কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘ফিলিংস’ নামের ব্যান্ড দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সেই ব্যান্ড দলের প্রধান গিটারিস্ট ও কণ্ঠদাতা হিসেবে সঙ্গীতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ মুক্তি পায়। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’। পরবর্তীতে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগরবাউল’।
বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে কাজ করার কারণে পশ্চিমবঙ্গেও বেশ জনপ্রিয় জেমস। ২০০৪ সালে বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সাথে তিনি কাজ করেন। ২০০৫ সালে বলিউড সিনেমা ‘গ্যাংস্টার’এ প্রথম কণ্ঠ দেন জেমস। ওই সিনেমায় তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। এর পর তিনি ‘লামহে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ এবং ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমাতেও গান গেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করেছেন জেমস। ২০০০ সালের প্রথম দিকে পেপসির একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন তিনি। এটিই ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্র। বাংলাদেশে ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে প্রচার হয় বিজ্ঞাপনটি। এর পর ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ‘ব্লাক হর্স’র বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন তিনি।
পারিবারিক জীবনে দুই কন্যা জান্নাত, জাহান, এক ছেলে দানেশ এবং স্ত্রী বেনজির সাজ্জাদকে নিয়ে জেমসের সংসার। বেনজির জেমসের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। ২০০২ সালে আলাদা হয়ে যান তারা।
সঙ্গীতের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও সুনাম রয়েছে জেমসের। গাজী আহমেদ শুভ্রর সাথে ‘রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি প্রডাকশন হাউজ পরিচালনা করেন তিনি। এই প্রডাকশন হাউজ থেকে ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করেন। প্রচুর রিয়ালিটি শো প্রযোজনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘দ্য রকস্টার টু’, ‘লাক্স চ্যানেল-আই সুপারস্টার’, ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ উল্লেখযোগ্য।