মুক্তবার্তা ডেস্ক:পরপর তিন বলে উইকেট নেওয়া—এটি আসলে পরিকল্পনা করে হয় না। হয়ে যায়। বলগুলো হয়তো যথাসাধ্য ভালো করার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু ভাগ্যের ছোঁয়া লাগেই। তাসকিনও হ্যাটট্রিক করতে পেরে নিজেকে মানছেন ভাগ্যবান, ‘উইকেট পেতে আমরা চেষ্টা করতে পারি, তবে এটি আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। স্রষ্টা সহায় ছিলেন, হয়ে গেছে। আমি ভাগ্যবান।’
দলের মধ্যে তাসকিন আহমেদের উপস্থিতি এমনিতেই একটু আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে। দীর্ঘদেহী, সুদর্শন, মুখে হাসি লেগে থাকে সারাক্ষণ। কাল আরও বেশি করেই যেন তাসকিন সবাইকে আকর্ষণ করলেন।
অন্য ক্রিকেটাররাও লবিতে নামলে সাড়া পড়ে গেছে আলিয়া রিসোর্টের কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু তাসকিন নামলে তাদের মধ্যে চাঞ্চল্যটা যেন একটু বেশিই হলো। কারণ ক্রিকেটের আসল গ্ল্যামার হলো পারফরম্যান্স। ২২ গজে আপনি ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে জ্বলে উঠুন, পাদপ্রদীপের আলো আপনাকে ঘিরে ধরবেই। ডাম্বুলায় পরশুর পরিত্যক্ত ম্যাচে তাসকিনই সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছেন শেষ ওভারে ওই হ্যাটট্রিকটি করে। ৪ টেস্ট, ২৫ ওয়ানডে ও ১৪ টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যেটি তার প্রথম হ্যাটট্রিক।
তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আসেলা গুনারত্নে ও সুরঙ্গা লাকমল আউট। টানা দুই বলে ২ উইকেট। এ অবস্থায় হ্যাটট্রিক বলের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানের বুকটা একটু কাঁপতে থাকে। তবে বোলারও যে স্নায়ুকাতর হয়ে পড়েন না, তা নয়। দুই পক্ষের স্নায়ুপীড়নটা থাকে একই রকম। কিন্তু তাসকিনের মধ্যে এটি একেবারেই ছিল না। তাসকিন নিজেই বললেন, ‘আমি একেবারেই নির্ভার ছিলাম। কারণ এর আগেও কয়েকবার হ্যাটট্রিকের সুযোগ আমার সামনে এসেছিল, কিন্তু হয়নি।’
শেষ বলটা করার আগে মিড অফে ফিল্ডার সৌম্য সরকার তাসকিনকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এটা কিন্তু তোর হ্যাটট্রিক বল, চেষ্টা কর, হয়ে যেতে পারে।’ বোলিং মার্কে দাঁড়িয়ে তাসকিনের মনে হলো হয়ে যেতে পারে, ‘আমার চোখে যেন কেমন উইকেট পড়ার দৃশ্যটা ভেসে উঠল। মনে হলো, হয়ে যাবে। ইয়র্কার দিলাম। ভালোই হলো, নুয়ান প্রদীপ বোল্ড। হ্যাটট্রিকটা হয়েই গেল! ওটা তো ব্যাটের কানায় লেগে চারও হয়ে যেতে পারত। আমি আসলে ভাগ্যবান, আল্লাহর রহমতে হয়ে গেছে।’
এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাসকিন হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়া ৩৬তম বোলার। সব মিলিয়ে এটি ৪১তম হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের হয়েই তার আগে আরও চারজনের আছে এই কৃতিত্ব। তারপরও তাসকিন ভীষণ খুশি। রেকর্ড বইয়ের একটা পাতায় তার নাম উঠল। ঝরঝর বৃষ্টি হচ্ছিল বাইরে, তাকে নিয়ে তখন দলের মধ্যে চলছিল উদযাপন। সতীর্থদের প্রশংসা, কোচদের স্তুতিতে ভেসেছেন। এর পেছনে পুরো কোচিং স্টাফ, সতীর্থদের অবদান তিনি স্বীকার করেন। তবে একজনের অবদান তার কাছে একটু অন্য রকম, ‘অবশ্যই বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সাহায্য কাজে লেগেছে। তার মতো একজন কিংবদন্তি পাশে থাকা মানেই বিরাট কিছু।’
অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন, প্রশংসার ফুল জুটছে। তবে তাসকিন নিজের কাজটি ভুলছেন না। পরশু কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ। সেখানে টেনে নিয়ে যেতে হবে এই বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা। ওই মাঠ সম্পর্কে তাসকিনের কোনো ধারণা নেই, আগে কখনো সেখানে খেলেননি। অনুমান করছেন, ব্যাটিং উইকেটই হবে। আর সে জন্য নিজেকে গুছিয়েও রাখছেন, ‘ঠিক জায়গায় বল ফেলতে হবে। মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক রাখতে হবে। নিখুঁত থাকতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’