মুক্তবার্তা ডেস্ক:রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিজেপি নেতাদের একাংশ ‘লাভ-জিহাদ’ শব্দবন্ধটির প্রবক্তা। এই শব্দবন্ধটি বেশি পুরোনো নয়। ২০১২ সাল নাগাদ এই টার্মটি ব্যবহার করতে শুরু করেন হিন্দুত্ববাদী নেতাদের একাংশ। আর তার বড় মুখ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হতে পারে তাঁরই ব্যবহৃত শব্দ ‘লাভ-জিহাদ’ বন্ধ করা।
‘জিহাদ’ কথার একটি অর্থ ধর্মযুদ্ধ। প্রচলিত ধারণা অনুসারে, একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায় ‘জিহাদ’ বা ‘ক্রুসেড’ ঘোষণা করে। এই ‘লাভ-জিহাদ’ আদৌ কেউ ঘোষণা করেছে কিনা তার কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু ভারতে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ ইসলাম ধর্মালম্বীরা ‘লাভ-জিহাদ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে ২০১৪ সাল নাগদ। সেই সময়ে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেও যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতাদের প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়ে ওঠে ‘লাভ-জিহাদ’।
জেনে নিন ‘লাভ-জিহাদ’ বলতে কী বোঝাতে চান তাঁরা? কী কী অভিযোগ?
১। মূল অভিযোগ হচ্ছে, মুসলমান পুরুষরা হিন্দু নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে এবং হিন্দু নারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হচ্ছে। এই ভাবে হিন্দু নারীর সম্ভ্রম নষ্ট হচ্ছে এবং দেশে মুসলমান জনসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
২। শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ নয়, অনেক জায়গায় খ্রিস্টানদের দিকেও অভিযোগের তির। বলা হয়, শুধু প্রেম নয়, অর্থ এবং সামজিক সম্মানের লোভ দেখিয়ে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে।
৩। ‘লাভ-জিহাদ’-এর জন্য বিনোদন জগৎও অভিযুক্ত। এই মতবাদীদের বক্তব্য, সিনেমা, সিরিয়াল, নাটকের মাধ্যমেও হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করার প্ররোচনা দেওয়া হয়। কাহিনিতে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলমান ছেলের প্রেম, বিবাহ এবং সুখের প্রদর্শনকে দায়ী করেন হিন্দুত্ববাদী নেতাদের একাংশ।
৪। অন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম-সহ বিভিন্ন ডনরা ‘লাভ-জিহাদ’-এ বিনিয়োগ করছেন বলেও অভিযোগ। হিন্দুত্ববাদী নেতারা বিভিন্ন সময়ে দাবি তুলেছেন, এই মুসলমান ডনরা ভারতের বিনোদন জগতে মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনোয়োগ করেন ধর্মীয় কারণেই।
উত্তরপ্রদেশ দিয়ে শুরু হলেও ‘লাভ-জিহাদ’ শব্দটি এখন গোটা দেশেই চর্চিত। আর সেই চর্চা থেকেই একটি প্রশ্ন উঠছে, ‘লাভ-জিহাদ’-এর কি সত্যিই অস্তিত্ব রয়েছে? নাকি শুধুই হিন্দুত্ববাদী নেতাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার?