মুক্তবার্তা ডেস্ক:সংসদ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে তিন দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কর্মশালায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয়ে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
৭ মে কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কর্মশালায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
কর্মশালার শেষ দিন মঙ্গলবার অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সবার জন্য জরুরি। বিশেষ করে যারা জনপ্রতিনিধি তারা তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে আমাদের কথা পৌঁছাতে পারেন। কোথাও কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে সেটা দূর করতে কাজ করতে পারেন। সেই সুযোগটা জনপ্রতিনিধিরা কাজে লাগাতে পারেন। যেন সবাই যথাযথভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারেন সেটাই এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শেখানো হয়েছে।
হালের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে কীভাবে সরকারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরা যায় সে বিষয়েই সংসদ সদস্যদের ধারণা দেয়া হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেয়া সংসদ সদস্যরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রচার করার পাশাপাশি সরকারের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত প্রবীণ সংসদ সদস্য, যারা অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন না তাদের সহযোগী নিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আগে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনকে (সিআরআই) কর্মসূচির বিষয়ে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কর্মশালা সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ১৩৭ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআইয়ের অ্যাসিসটেন্ট কো-অর্ডিনেটর তন্ময় আহমেদ ও সিনিয়র এনালিস্ট ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি।
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, কীভাবে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালাতে হবে সেটা আমরা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জানতে পেরেছি।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাগুলো তৃণমূল মানুষের কাছে তুলে ধরাই এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে কম। সে ব্যাপারে নারীদের সচেতন করা প্রয়োজন।
সিআরআই সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে গবেষণা উইং সিআরআইয়ের একটা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে। সরকারের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটা প্রেজেন্টেশনের সফট ও হার্ড কপি সরবরাহ করা হয়েছে সংসদ সদস্যদের। পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে সিআরআই কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবে বলে সংসদ সদস্যদের জানানো হয়েছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, প্রতিদিন ফেসবুকে একটা করে পোস্ট আপনারা দিন। প্রয়োজনে দুইটা, তিনটা করে পোস্ট দিতে পারেন। আপনাদের ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড করার বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব।
কর্মশালায় সাংসদদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, কীভাবে ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা যায়, কনটেন্ট তৈরি করে দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে জনগণের সঙ্গে কার্যকর দ্বিমুখী যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। এছাড়া অনলাইনে কীভাবে উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড করা যায়, অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ অন্যান্য বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
তৃণমূল নেতাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে
জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করবে সিআরআই। আগামী ২১ ও ২২ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলবেন সিআরআইয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও একজন করে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রচারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।