রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই দায়ী: যুক্তরাষ্ট্র

মুক্তবার্তা ডেস্ক:  রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সংকটের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিশ্ব এই হত্যাযজ্ঞে চুপ করে বসে থাকতে পারে না।’

সাম্প্রতিক সহিংসতার মুখে ৫ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, সে বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেবে কি নেবে না, তা নিয়ে কিছু বলেননি টিলারসন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজ’ নামের থিঙ্ক ট্যাংক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় টিলারসন বলেন, ওই এলাকা নিয়ে (রাখাইন রাজ্য) নৃশংসতার যে খবর হচ্ছে, তারপরও বিশ্ব নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না এবং তা চেয়ে চেয়ে দেখতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ‘যা হচ্ছে, তার জন্য আমরা প্রকৃত পক্ষে সামরিক নেতৃত্বকেই দায়ী করছি।’ রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা ‘ভীষণ উদ্বিগ্ন’ বলে জানান তিনি।

মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে পুনরায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং যারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনমূলক অভিযান চালানোর জন্য দায়ী বেছে বেছে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ জন আইনপ্রণেতা আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ওই ৪৩ জন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা এক চিঠিতে যৌথভাবে রেক্স টিলারসনের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘যা ঘটেছে, তা প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করবে’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। যারা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও বলেছেন তারা।

আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কথাকথিত সন্ত্রাসীরা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি আউটপোস্টে হামলা চালালে এই অজুহাতে অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর সীমাহীন বর্বরতা ও নিপীড়ন চালাতে শুরু করে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের হত্যা, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের সহায়-সম্পদ লুট করেছে উগ্রবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদার ও সেনারা। হাজারে হাজার রোহিঙ্গার স্রোত এসে ছেয়ে গেছে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা। এখনো আসছে।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আর কোনো চাপ নিতে না চাইলেও দলে দলে আসছে তারা। ক্ষুধার্ত, অসহায়, অনাহারি-অর্ধাহারি, আহত, পঙ্গু-প্রতিবন্ধী, শিশু-কিশোর, যুব-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ রোহিঙ্গা মুসলিমরা আসছে তো আসছেই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান এ সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে যৌথভাবে বিশ্ব সম্মেলন আহ্বান করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন, ত্রাণ সমন্বয়কবিষয়ক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা। ২৩ অক্টোবর জেনেভায় সম্মেলনটি হওয়ার কথা।

টিলারসন বুধবার বলেছেন, ‘মিয়ানমারের জঙ্গি সমস্যা আছে, ওয়াশিংটন তা বোঝে। কিন্তু সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলিত হতে হবে, এ বিষয়ে তারা যেভাবে যা কিছু করছে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা যাতে পূর্ণ ধারণা পেতে পারি, সেজন্য ওই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘এসব প্রতিবেদন যদি সত্য হয়, তাহলে যে কেউ হোক না কেন, তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা না বললেও টিলারসন বলেছেন, এই কথার আলোকে জাতিসংঘসহ অন্যদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্ত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ভাবছে। যে আলোচনা হয়েছে, তাতে শীর্ষ জেনারেলরা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকতে পারে। কিন্তু এতে করে মিয়ানমারে ব্যাপকভিত্তিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমা নেতারা। কারণ এরই মধ্যে সু চির সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।

Related posts

Leave a Comment