রাজধানীতে মানবপাচারকারী চক্রের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

মুক্তবার্তা ডেস্ক:র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা এবং বিমানবন্দর এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ৯ জন সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও অবৈধ পথে মালয়েশিয়া ও সাইপ্রাস পাচারকালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে নয়জন ভিকটিমকেও উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বিপুল পরিমান জাল ভিসা, পাসপোর্ট এবং জাল ভিসা ও পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জামাদি ও মুক্তিপণের টাকা উদ্ধার।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. বাদশা শেখ, মো. মামুন, মো. রিপন হোসেন, মো. নাসির উদ্দিন, মো. মনিরুজ্জামান, সজল কুমার বাইন, মো. নাছির উদ্দিন, মো. আহসানুজ্জামান এবং মো. রাজিব।

এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ১০০টি পাসপোর্ট, ৩২টি জাল ভিসা, আটটি মনিটর, ছয়টি সিপিইউ, পাঁচটি ইউপিএস, চারটি প্রিন্টার, নয়টি কীবোর্ড, একটি স্ক্যানার, ২৫টি মোবাইল, ছয়টি সীল মোহর, একটি ফটোকপি মেশিন, ২৮ হাজার ইন্দোনেশিয়া রিংগীত, ৪২ মালয়েশিয়ান রিংগীত এবং নগদ ৯৪ হাজার ৩৮৪ টাকা।

র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক বলেন, র‌্যাব-৩ জানতে পারে যে, বিমান বন্দর এলাকার আশেপাশে অভিযান পরিচালনা করে অভিবাসন প্রত্যাশী সাত জন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের নিকট থেকে র‌্যাব জানতে পারে যে, মানবপাচারকারীর মূল হোতা আবদুল হালিম মালয়েশিয়া থেকে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদশা শেখ, রিপন ও মামুন হোসেন ওরফে ভাগ্নে মামুনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের যোগসাজশে বিদেশে পাঠানোর নামে মানবপাচার করছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের গত ২১ মার্চ র‌্যাব বাড্ডা সাতারকুল এলাকা থেকে বাদশা শেখকে জাল ভিসা, পাসপোর্ট ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার করে এবং চক্রের মূল হোতা হালিম বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে আছে বলে জানা যায়।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, এ চক্রের বৈধ কোন রিক্রুটিং লাইসেন্স বা এই জাতীয় কোন কাগজপত্র নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রতারনার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করে আসছে। তারা স্বল্পকালীন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়ার বিমান টিকিট কিনে থাকে।

র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাদশা জানায় যে, তাদের চক্রের সদস্য মতি, মিজান ও অন্যান্যরা লোকাল এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে বিদেশ গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। সংগৃহীত পাসপোর্ট সমূহ পরবর্তী ধাপের জন্য তারা বাদশা, মামুন এবং রিপনকে দেয়। বাদশা মালয়েশিয়া থেকে হালিমের নির্দেশনায় কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বৈধ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই বিমান টিকেট সংগ্রহ করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে গুলশান, এবং পল্টন এলাকা থেকে নাসির, মনিরুজ্জামান, সজল ও নাসিরউদ্দিনকে বিপুল পরিমান পাসপোর্ট, ভিসা ও বিদেশে পাঠানোর অন্যান্য অবৈধ কাগজপত্রাদি এবং বিভিন্ন ব্যাংকের সীলসহ গ্রেপ্তার করে।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন; গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা জাল ভিসা প্রস্তুত এবং বিদেশ গমনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অবৈধ কপি তৈরি, এবং টিকিট সংগ্রহ করে ভিকটিমদের মামুন ও রিপনের সহায়তায় অবৈধভাবে মালয়েশিয়া অবস্থানরত আবদুল হালিমের কাছে পাঠাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এসব ট্রাভেল এ্যাজেন্সির মাধ্যমে জাল ট্রেড লাইসেন্স তৈরির কাজও তারা করে থাকে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় থেকে রিপন এবং মামুন হোসেন ওরফে ভাগ্নে মামুনকে জাল ভিসা, পাসপোর্ট ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, পলাতক অবস্থায় থেকে হালিমের যাবতীয় নির্দেশনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল হালিম বিমানবন্দর থানায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ২৫ নম্বর মামলা সহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি।

Related posts

Leave a Comment