মুক্তবার্তা ডেস্ক:তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখেছে ‘ভুল চশমা’ দিয়ে। আর তাদের দেখার চোখটাও ‘ঝাপসা’। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদন ‘তথ্য নির্ভর নয়’ বলে তা প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও মন্তব্য প্রদান আমরা নীতিগতভাবে সমর্থন করি না।”
বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক আছে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানান তথ্যমন্ত্রী।
২০১৬ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।
ইনু বলেন, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ তা যথাযথ তথ্য নির্ভর নয়।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান ও আইন দ্বারা পরিচালিত একটি দেশ। দেশের সব সংস্থা সংবিধান ও আইনের পাশাপাশি নিজস্ব সংবিধিবদ্ধ বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। “আইন বহির্ভূত কোনো কাজ করার সুযোগ সরকারের নাই, কোনো সংস্থারও নেই। কোথাও এর ব্যত্যয় হলে আইনী প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।”
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ে গণতান্ত্রিক দেশ। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে উভয় দেশ একসাথে কাজ করছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে দুই দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়াস চালাব।”
তিনি বলেন, “ধর্মীয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী, উগ্রবাদীরা বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মাটিতেই তারা তৎপর। এই সংগঠনগুলো যাই বলার চেষ্টা করুক না কেন, আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, তদন্ত, আদালতের বিচার- কোনো জায়গায়ই এসব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সম্পর্কের প্রমাণ পাইনি।
“গত এক বছরে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সবগুলোই অসফল হয়েছে। ঘটনাস্থলেই বেশিরভাগ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কেউই পালাতে পারেনি। এই তৎপরতার ফলে আমরা মনে করি, জঙ্গি সশস্ত্র কর্মের কুফলটা গত এক বছরে আমরা দেখেছি। জঙ্গিরা আগের চেয়ে অনেক কোণঠাসা হয়ে গেছে।”
সুতরাং প্রতিবেদনের সঙ্গে বিষয়টি যায় না উল্লেখ করে ইনু বলেন, “তাদের প্রশংসা করা উচিত ছিল যে, বিছিন্ন, বিক্ষিপ্ত আক্রমণ হলেও তারা প্রতিহত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় গত এক বছরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী যেসব ঘটনা দেখেছি, তার চেয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেক বেশি সফল।” নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়েও প্রতিবেদনের বক্তব্য সঠিক নয় বলে জানান তিনি।
“আমাদের এখানে এই অধিকারে আইনগতভাবে কোনো বাধা গত এক বছরে দেওয়া হয়নি। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আমরা সংকুচিত করিনি। প্রশাসনিক কোনো নির্দেশও দেইনি।
“মনে রাখতে হবে, আমরা সংবিধানের আওতায় কষ্ট হলেও জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের চেষ্টা চালাচ্ছি। যেমন ভারত, ইউরোপ ও আমেরিকা চালাচ্ছে। সুতরাং এখানে মানবাধিকার ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সংকুচিত করার অভিযোগ সত্য নয়।”
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়েও তারা কথা বলেছে। আমি বলছি, বাংলাদেশে আইনগতভাবে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচার বহির্ভূত কোনো হত্যা করার আইনগত বিধান নাই। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যারা নিহত হয়েছে, তা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে চালানোর প্রয়াস সঠিক নয়।” সূত্র: বিডিনিউজ