মিয়ানমার চেয়েছে রোহিঙ্গারা আর না ফিরুক: জাতিসংঘ

মুক্তবার্তা ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে চিরতরে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে পরিকল্পিত অভিযান ও হামলার ছক তৈরি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইনে সামরিক অভিযানের মুখে পালানো রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে ফিরতে না পারে সেজন্যও সুসংগঠিত, সমন্বিত ও পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম হামলা সুসংগঠিত, সমন্বিত ও পরিকল্পিত ছিল। এটার উদ্দেশ্য শুধু তাদের রাখাইন থেকে নিশ্চিহ্ন করাই নয়, তারা যাতে আর রাখাইনে তাদের বাড়ি-ঘরে না ফিরতে পারে সেই উদ্দেশ্যও ছিল। খবর আলজাজিরা ও এএফপির।

ওই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ৬৫টি ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাৎকারে কয়েকশ’ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলা হয়। ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অভিযান জোরদার হওয়ার পর এসব রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অভিযানে অংশ নেয়া সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। এ অভিযানে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

জাতিসংঘ জানায়, সহিংসতার আগে ও পরে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি ত্যাগ করার ঘোষণায় মাইক ব্যবহার করা হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ‘তোমরা এখানকার জনগণ নও। তোমরা বাংলাদেশে চলে যাও। যদি তোমরা না যাও, আমরা তোমাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেব এবং তোমাদের হত্যা করব।’

রোহিঙ্গাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জ্ঞান ধ্বংস করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক এই সহিংসতায় শিক্ষক, গবেষক এমনকি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ ধর্মীয় ও সমাজের নেতৃত্ব স্থানের লোকজনকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক চিহ্ন ও স্মৃতিগুলো মুছে ফেলার সব ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং সেগুলো এমনভাবে করা হয়েছে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে গেলেও তাদের বাড়ি-ঘরগুলো চিনতে পারবে না।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রা’দ আল-হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এ অভিযান জোরপূর্বক বিশালসংখ্যক মানুষকে উৎখাত করা এবং যাতে করে তারা ফিরে আসতে না পারে।

জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ইঙ্গিত দেয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি ধ্বংস করছে, ঘর-বাড়ি ও পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শুধু রোহিঙ্গাদের উৎখাত করতে নয়, যাতে করে তারা আর ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই সেনাবাহিনী এই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

Related posts

Leave a Comment