বরিশালে চামড়ার বাজারে হতাশার ছাপ

মুক্তবার্তা ডেস্ক: মূলধনের সংকটের কারণে বরিশালে চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকামে চামড়া সংগ্রহ এবার আশানুরূপ হয়নি। আর ভালো দাম না পাওয়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও লোকসানের সম্মুখীন।

বরিশালের চামড়া বাজারের সবচেয়ে বড় মোকাম পদ্মাবতী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ঘুরে এবার ঈদুল আজহার হতাশাজনক এই চিত্রের দেখা মেলে।

বরিশাল বিভাগের চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম পদ্মাবতী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতিতে এবার মূলধনের তীব্র সংকট। প্রত্যাশামত মূলধন যোগাড় না হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার কাঁচা চামড়ার সংগ্রহ অভিযান আশানুরূপ করতে পারেননি।

এবার গরুর চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার পিস হলেও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত। ঢাকার ট্যানারিগুলো বিগত বছরের প্রায় দুই কোটি টাকা এখনো বকেয়া রাখায় এই মূলধনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বরিশাল নগরীর পদ্মাবতী রোডের চামড়া ব্যবসায়ী মো. বাচ্চু  বলেন, ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় নতুন করে চামড়া কিনতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। এর মধ্যে আবার স্থানীয় পাওনাদারদের চাপতো রয়েছেই। লোকসানে চামড়া বিক্রি করার পরও সেই টাকা না পেয়ে এবছর এই ব্যবসায় টাকা লগ্নি করা নিয়ে সংশয়ে প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি এবারে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে শংকাও প্রকাশ করেন তিনি।

অপরদিকে এবারে চামড়ার দামেও বেশ মন্দাভাব বলে জানিয়েছেন একাধিক চামড়া ব্যবসায়ী।

তারা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪৫ টাকা বেঁধে দিলেও স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে। স্থানীয়ভাবে বড় আকারের ৩০/৩৫ বর্গফুটের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ছয় থেকে সাতশ টাকায়, এভাবে ২০ খেকে ২৫ বর্গফুটের মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া ৫০০ টাকার নিচে, আর ছোট গরুর চামড়া ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বরিশালের পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, চামড়ার ব্যবসায়ী সমিতি তাদেরকে কম দরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করছে- আর এর ফলে তাদের ব্যপক লোকসানের আশংকা দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪৫ ফুট দর দিলেও এই চামড়াকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের যে খরচ হয় সেটির হিসেবে আসেনি-আর এর ফলে চামড়া তারা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনছে।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহীন বলেন, বাজারে প্রয়োজনীয় মূলধন না থাকায় এবার চামড়া কেনা কাটায় নেই কোনো প্রতিযোগিতা। অধিকাংশই পাইকার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতেই বেশি চামড়া কিনছে। চামড়া কেনাকাটায় গতি না থাকায় সংগ্রহ অভিযানেও তাই ভাটা পড়েছে, আর এর ফলে পাইকারি চামড়ার বাজারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

এদিকে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করার পর গত তিন বছরের টাকা না পাওয়ায় সংশয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই এবারে চামড়া ক্রয় করলেও তাদের সংশয় এবং শংকা শেষ হচ্ছে না। তাদের আশংকা এবারও লোকসানের মুখ দেখতে তবে চামড়া থেকে।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির শহিদুর রহমান শাহিন জানান, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের সাথে ওতপ্রতভাবে যে পন্যটি জড়িত তা হলো লবণ। কিন্তু এই লবণ নিয়েও তৈরি হয় সিন্ডিকেট। তার দাবি যদি সরকার তৃণমূল ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণসুবিধা দিত তাহলে তারা আজ এই সমস্যয় পরতেন না।

এই ব্যবসায়ী জানান, বরিশাল বিভাগে প্রতি বছর কোরবানির সময় স্থায়ী ও মৌসুমী মিলে পাঁচ শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ২০ কোটি টাকারও বেশি চামড়া ঢাকায় পাঠায়। কিন্তু এবারে কী পরিমাণ চামড়া পাঠানো হতে পারে তা নির্দিষ্ট করে না বলতে পারলেও আশানুরূপভাবে পাঠানো যাবে না বলে জানান তিনি।

Related posts

Leave a Comment