মুক্তবার্তা ডেস্ক:ঈদ যাত্রার প্রথম দিনেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া ঘরমুখী যাত্রীদের।
গতকাল বুধবার ২১ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ জটে যানবাহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দুর্ঘটনার কারণে যানজট তৈরি হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল।
শুধু ঢাকা-ময়মনসিংহের গাজীপুর অংশে যানজট তুলনামূলক কম ছিল। গাজীপুরের কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সরকার বলেন, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চন্দ্রায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে গতকাল যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট হয়নি।
কয়েক দিন ধরে দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোয় নিয়মিত যানজট হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঈদযাত্রার যানবাহনের চাপে যানজট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক:- পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় টিকিট দিতে ধীরগতির কারণে যানবাহন ধীরে চলতে থাকে। একপর্যায়ে টোল প্লাজা থেকে তালতলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় যানজট হয়। গতকাল বেলা আড়াইটার পর মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজার ওজন মাপার আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ঠিক হয়ে গেলে যানজট থাকবে না।
সকাল আটটার দিকে একই মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা সেতুতে একটি মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে যায়। পুলিশ রেকার দিয়ে বিকল ট্রাকটি দ্রুত সরিয়ে নিলেও এ কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলে। পরে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে বেলা দুইটার পর সেতু থেকে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. হাসেম উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর থেকে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বাড়তে থাকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের ভোগান্তি যেন কম হয়, সে জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর:- সকাল থেকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর (ঢাকা বাইপাস) সড়কের রূপগঞ্জের ভুলতা-গোলাকান্দাইল পয়েন্টে তীব্র যানজট হয়। বেলা দুইটার পর বৃষ্টি শুরু হলে যানজট আরও তীব্র হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুরিয়া থেকে বরপা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার ও মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর সড়কের গোলাকান্দাইল দক্ষিণপাড়া থেকে চরপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েক’শ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালক চরম দুর্ভোগে পড়েন।
রূপগঞ্জের কাঞ্চন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকায় গাড়ি চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা না রেখে ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙাচোরা ও গর্ত, মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর সড়কের কাঞ্চন সেতুর ওপর ও টোল প্লাজার উভয় দিকে ভাঙাচোরা, ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি ও টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে এ দুটি সড়কে প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া আইন না মানা ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং হাটবাজারের চাপেও এখানে যানজট হচ্ছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা-পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক:- ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল সারা দিনই যানবাহনের চাপ ছিল। দুপুরের পর পর্যন্ত যানজট ছিল না। তবে বিকেল চারটার পর যানজট মির্জাপুরের কুর্ণী থেকে গোড়াই পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মির্জাপুরের ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রণব কুমার সরকার জানান, বিকেলে ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ের পাশে গর্ত মেরামতের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে জটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক:- গতকাল সকাল সাতটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুলজান এলাকায় ঢাকাগামী মাছবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীতমুখী পণ্যবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাক দুটি দুমড়েমুচড়ে মহাসড়কে পড়ে যায় এবং মাছ ব্যবসায়ীসহ আটজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল নয়টার দিকে পুলিশ রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক দুটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
সকাল আটটার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘিওরের বানিয়াজুরী পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ সারিতে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট-বড় গাড়ি আটকা পড়ে।
দুর্ঘটনাস্থলে যশোরগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এখানেই দুই ঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে আছি।’
পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ:- ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কারণে গতকাল সকাল থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বেলা তিনটা পর্যন্ত ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ঘাটে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। আজ বৃহস্পতিবার ফেরি আমানত শাহ মেরামত শেষে এ নৌপথে যান পারাপারে যুক্ত হবে। এ ছাড়া মেরামত শেষে অপর ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানও সন্ধ্যায় পাটুরিয়া আসার কথা রয়েছে।