মুক্তবার্তা ডেস্ক:১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানিদের উপেক্ষা করে ছাত্র সমাজের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায়। সে সময় উপস্থিত শিক্ষার্থী-আন্দোলনকারীদের ভাষায়, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা অর্জনের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল।
শিবনারায়ণ দাস বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার অন্যতম এবং মূল ডিজাইনার। তিনি একজন ছাত্রনেতা ও স্বভাব আঁকিয়ে ছিলেন। তার তৈরি করা পতাকা সেদিন ওড়ানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়।
স্বাধীনতা অর্জনের পরের বছর, ১৯৭২ সালের এই দিনে দৈনিক বাংলা পত্রিকার পাঁচ এর পাতায় লেখা হয় সেই স্মৃতি। সেখানে ‘বিক্ষোভে উদ্বেল সেই দিনগুলো’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ছাত্র সভায় বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হলো। এ সভাতেই ছাত্র সমাজ সর্বপ্রথম উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। সেই যে পতাকা উড়েছিল, তা আর নামেনি।
সেদিন আসম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় এক ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলার স্বপ্নের লাল-সবুজের পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলন করেন। তবে এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আরও অনেক আগে। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে ছাত্র নেতারা একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
একাত্তরের এই দিনে লাল-সবুজে হলুদ মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল স্বাধিকারের আহ্বান। কেবল পতাকা উত্তোলন নয়, একাত্তরের এই দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক জনসভার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল এই দিনে। পরে ২৩ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে ও স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে সেই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার শিবনারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকার মানচিত্রটির বদলে পতাকার মাপ, রঙ ও এর ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন চিত্রকর কামরুল হাসানকে। ২ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথ জনারণ্যের রূপ পায়। সেদিনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র সহ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পেয়েছিলাম আমরা।