নিশ্চিন্তে ক্ষমতায় থাকছেন এরদোয়ান

মুক্তবার্তা ডেস্ক:তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারের পক্ষে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সমর্থন দিয়েছে। গতকাল দেশটিতে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ৫১% এর কিছু বেশী ভোট পেয়ে সীমিত ব্যবধানের জয় পায় এরদোয়ানের ‘ইয়েস’ প্রচারণা।

ফলে সাংবিধানিক সংস্কারে তার সামনে আর কোন বাধা থাকল না। এই জয়ের ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আরো অন্তত এক যুগ ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হল।
বলা হচ্ছে নতুন যে সংবিধান আসতে যাচ্ছে, তাতে প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন।

এর ফলে তুরস্কে সংসদীয় গণতন্ত্রের বদলে পুরোমাত্রায় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী শাসন শুরু করা যাবে, এরদোয়ানের হাতে আসবে প্রভূত ক্ষমতা, দেশটির আধুনিকায়নের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ বলে তার সমর্থকদের দাবি।

অবশ্য তুরস্কের প্রধান দুটি বিরোধী দল বলছে, তারা গণভোটের এই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করবে। দেশটির রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ৬০ শতাংশ ভোট পুণঃগণনার দাবি জানিয়েছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলে এরদোয়ান আরও বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠবেন বলে বিরোধী শিবিরের শঙ্কা।

বিবিসির খবরে বলা হয়, গণভোটে জয়ের পর এরদোয়ানের সমর্থকরা বড় শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস শুরু করে। অন্যদিকে এরদোয়ানবিরোধীরা ইস্তাম্বুলে হাড়ি-পাতিল পিটিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।

রয়টার্স জানিয়েছেন, রোববার তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং দেশের বাকি অংশে ভোট শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি জায়গায় সহিংসতা হয়, দিয়ারবাকির এলাকায় ভোট কেন্দ্রের কাছ গুলিতে নিহত হন তিনজন।

কি আছে সেই সংবিধানে?

-খসড়া অনুযায়ী আগামী ২০১৯ সালের ৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন।
-প্রতি মেয়াদে ৫ বছর করে অন্তত দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। ফলে নির্বাচনে জিতলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন এরদোয়ান।
-মন্ত্রী-সহ সকল শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট সরাসরি নিয়োগ করতে পারবেন।
-কয়েকজন ভাইস-প্রেসিডেন্টও মনোনীত করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বলে কিছু থাকবে না আর। বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন বিনালি ইলদিরিম।
-বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের।
-জরুরী অবস্থা জারি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।
-অর্থাৎ এই সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে তুরস্ক পার্লামেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থায় প্রবেশ করবে।

এরদোয়ানের সমর্থকেরা বলছেন, পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার পরিবর্তে নির্বাহী প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থার প্রচল তুরস্ককে আধুনিক করবে। তবে বিরোধীরা জানিয়েছে, তারা গণভোটের এই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করবে। তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সবাইকে জনগণের রায় মেনে নেবার আহ্বান জানিয়েছেন।

দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবার পর ২০১৪ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হন এরদোয়ান, এটা হওয়ার কথা ছিল কার্যত একটি আনুষ্ঠানিক পদ। কিন্তু আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্কের পর তুর্কীদের উপর সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক প্রভাব সম্পন্ন নেতা এরদোয়ান প্রভাব প্রতিপত্তি তাতে কিছু হ্রাস পায়নি।

গত বছর জুলাই মাসে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটে, যার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এর পর তুরস্কের অন্তত এক লাখ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, কারান্তরীণ হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেই থেকে তুরস্কে একটি জরুরী অবস্থা চলছে।

Related posts

Leave a Comment