মুক্তবার্তা ডেস্ক: প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠিয়ে এখন দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্য গত দুই দিন ধরে সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা দেখা করে তাঁর ওপর প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করছেন। অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বারবার প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করার চেষ্টা করলেও পুলিশি বাধায় দেখা করতে পারেনি।’
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘একজন সুস্থ ব্যক্তিকে অসুস্থ বানিয়ে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ইতিহাস আওয়ামী লীগের অনেক পুরনো। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হককে পাগল বানানো হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের কত নেতাকেই অসুস্থ বানিয়ে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতিকেও তারা আওয়ামী স্টাইলে অসুস্থ বানিয়ে এখন বিদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে।’
বাস্তবে প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন এমনটা দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত পরশু তিনি যখন মন্দিরে গেছেন তখন তাঁর সাথে যাদের দেখা হয়েছিল তারা পরিষ্কার করে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তাঁর বাসভবনে দেখা করে গণমাধ্যমকে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি।’
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোরপূর্বক এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন রিজভী। বলেন, ‘সরকার গোটা বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে। আসলে প্রধান বিচারপতিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার এটি একটি প্রথম পদক্ষেপ। এখন নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই। সব বিভাগের ওপরই একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল শেখ হাসিনার। মানুষের বিচার প্রার্থনার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু আর থাকলো না। এর ফলে আগামী দিনের সকল রায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ হবে বলে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে হুমকি দিয়ে ছুটি নিতে বাধ্য করা অথবা ছুটির নামে জালিয়াতি করা হয়েছে সেটি নজিরবিহীন। যেভাবে তাকে নাজেহাল করা হয়েছে, তাতে বিচার বিভাগের সম্মান, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নস্যাৎ হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের সম্মান ও ভাবমূর্তি বলে কিছু অবশিষ্ট রইলো না। এই সরকারের দুঃসহ দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সকলে মিলে সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের লোকদেরসহ ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুই অর্জন করতে পারেনি বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। ভারতকে ম্যানেজ করতে পারেনি।’
রিজভী বলেন, ‘দেশকে স্থায়ী দুঃশাসনের বজ্র আটুনিতে বেঁধে ফেলা হলো। বিচার বিভাগের ওপর আরও নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ন্যায়বিচারের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়া হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ঘটনায় গোটা বিচার ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হলো।’
কোন সমস্যাই দেশের অগ্রগতি থামাতে পারবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘এ কথাতো তিনি বলবেনই। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধীদলের চিন্তা ও বিশ্বাসসহ গণতন্ত্রই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মনঃপীড়া ও তার ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র সমস্যা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ রাষ্ট্রের স্বাধীন স্তম্ভগুলোকে কঠিন কুঠারাঘাতে উপড়ে ফেলে এখন প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার আধিপত্যের রঙ্গিন অগ্রগতি ও ক্ষমতাসীনদের লোভ লালসার অগ্রগতিতে জাতীয় সম্পদ লোপাট হতে আর কোন বাধা থাকার তো কথা নয়।’