দুর্বল দেশের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাব

মুক্তবার্তা ডেস্ক:দুর্বল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবল দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি উঠেছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে। সংস্থাটির শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া ৪০টি দেশের মধ্যে ৩৫টি দেশ এই দাবি করেছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পাঁচ দিনের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববার দিনভর এই কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিতর্ক হয়।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক দেশের সাংসদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইপিইউ থেকে উত্থাপিত এই খসড়া প্রস্তাবের (রেজল্যুশন) পক্ষে অবস্থান নেওয়া ৩৫টি দেশের মধ্যে আছে রাশিয়া, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও স্বাগতিক বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ পাঁচটি উন্নত দেশ।

খসড়া এই প্রস্তাবটি নিয়ে আজ সোমবারও আলোচনা চলবে। চূড়ান্ত ভোটাভুটি শেষে আগামী বুধবার প্রস্তাবটি গৃহীত হবে।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকারকে কোনো সামরিক বাহিনী বা অন্য যেকোনো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টাকে এই খসড়া প্রস্তাবে চরম নিন্দা জানানো হয়েছে। অন্য দেশের নাক না গলানোর ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ যাতে ভূমিকা রাখে, সে জন্য সংসদকে উৎসাহিত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে এই খসড়া প্রস্তাবে।

এ বিষয়ে সম্মেলনে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর হস্তক্ষেপের নীতিতে সমর্থন করে না। সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো বিভিন্ন অজুহাতে সার্বভৌম ছোট দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করে। ছোট দেশগুলো এসব হস্তক্ষেপ বন্ধে এবারের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা–বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম। আলোচনা শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্র নেই, জঙ্গিবাদ আছে, দুর্নীতি চলছে, মানবাধিকার নেই বা কোনো একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেক শক্তিশালী দেশ দুর্বল দেশের ওপর হস্তক্ষেপ করে। ছোট দেশগুলো বলেছে, এ ধরনের হস্তক্ষেপ বিশ্বে শান্তি নষ্ট করছে।

ফারুক খান বলেন, উন্নত পাঁচটি দেশ আইপিইউর বিদ্যমান রেজল্যুশনকে বহাল রাখার পক্ষে বলেছে। কিন্তু ৩৫টি দেশ বলেছে, এই রেজল্যুশনের পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশের বক্তব্যে একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও রোহিঙ্গা সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে চীন বলেছে, বিদেশি শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল; কিন্তু পরে দেখা গেছে, সেখানে এ ধরনের কোনো অস্ত্র নেই। আর রাশিয়া বলেছে, খসড়া প্রস্তাবটি বাতিল হলে সারা বিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে।

অন্যদিকে জার্মানি বলেছে, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহরণ আছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এই খসড়া প্রস্তাব বাতিল করা উচিত। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডের অবস্থানও একই রকম।

রাশিয়া ইউক্রেনের একাংশ ক্রিমিয়া দখল করেছে। কিন্তু তারপরও অন্য দেশের ভেতর নাক গলানো বন্ধের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়ার সংসদ ক্রিমিয়া দখলের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। তাই এ ধরনের খসড়ার কোনো গুরুত্ব নেই।

খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অন্য দেশের কোনো বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করে না। তিনি বলেন, শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে, তবে জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে।

গতকাল সম্মেলনে তিনটি জরুরি অ্যাজেন্ডা উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে মেক্সিকো বলেছে, অভিবাসন বিষয়ে বিশ্বব্যাপী কঠোর নিয়ম মানবাধিকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আরব দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণমূলক আইন বসতি স্থাপনকে যেভাবে বৈধতা দিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। বেলজিয়াম বলেছে, ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া ও কেনিয়ার দুর্ভিক্ষ দেশগুলোর জনসংখ্যার ওপর প্রভাব ফেলবে। এই তিন অ্যাজেন্ডার মধ্যে ভোটাভুটিতে বেলজিয়ামের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

বিকেলে আইপিইউর গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জিন মিলিগান সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, স্থায়ী কমিটিগুলোতে যেসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে আগামী বুধবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংসদীয় সংস্থা আইপিইউ সম্মেলন গত শনিবার শুরু হয়। এদিন নারী সদস্যদের অধিবেশনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ৮১ দশমিক ৮ শতাংশ সাংসদ নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের, ২০ শতাংশ যৌন হয়রানির এবং ২৬ শতাংশ শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন।

বাণিজ্য মেলা:

আইপিইউ সম্মেলন উপলক্ষে বিআইসিসির পাশের মাঠে বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই মেলার আয়োজন করেছে। প্রথম দিনে মেলায় ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। সূত্র: প্রথম আলো

Related posts

Leave a Comment