জলাবদ্ধতা রাজধানী ঢাকার জন্য একটি মহাযন্ত্রণা

মুক্তবার্তা ডেস্ক: জলাবদ্ধতা রাজধানীর ঢাকার এতে মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। পুরোনো এই সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্প নেয়া হয়েছে বটে, কিন্তু সমাধানের বদলে দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে তা।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখন একে-অপরের ওপর দোষারোপ করছে। ওয়াসা বলছে জলাবদ্ধতার জন্য তারা দায়ী নয়। সিটি করপোরেশন বলছে ওয়াসাই দায়ী। অন্যদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দরকার সমন্বিত কর্মোদ্যোগ। এক-অপরকে দোষারোপ করে এ্ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু সমন্বিত কর্মোদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

ঢাকার পরিকল্পনা বলতে জানা যায় ১৯৫৯-৬০ সালের একটি পরিকল্পনার কথা। ওই মাস্টার প্ল্যানে ঢাকার চারপাশের নিম্নাঞ্চল ও নদী, শহরের খাল, বিল, ঝিল— এসব রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল। অর্থাৎ একধরনের জলের সঙ্গে বসবাসের পরিকল্পনা। কিন্তু আশির দশকে এসব বিবেচনায় না নিয়ে একধরনের লাগামছাড়া নগরায়ণ শুরু হয়। তাতে সমস্যা আরও বেড়ে যায় বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে যায় রাজধানীর অনেক এলাকা। খিলক্ষেত, মতিঝিল, মালিবাগ, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, কাজলা, শাহজাহানপুর, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। রাজধানীর এ জলাবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাসহ সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন নগরবিদরা।

বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও গত কয়েক দিন নজিরবিহীন জলাবদ্ধতা দেখছে নগরবাসী।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সাম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন বলেছিলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ব্যর্থ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না। তাদের কারণে নগরীর মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।

সাঈদ খোকন আরো বলেন, ‘নগরীর খাল রক্ষার দায়িত্ব ওয়াসার। অথচ খাল দখল হচ্ছে। নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দায় আসছে আমাদের ওপর।’

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়েছে। ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জেট অ্যান্ড সাকার’ মেশিন কেনা হয়েছে। এটা প্রতিদিন কাজ করছে। কিন্তু রাজধানীর জলাবদ্ধতা কেবল ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের পক্ষে নিরসন করা সম্ভব নয়। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের সঙ্গে ১৪টি সংস্থা সম্পৃক্ত। খাল উদ্ধারের দায়িত্ব জেলা প্রশাসক ও ঢাকা ওয়াসার।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা জন্য ওয়াসার দায় অস্বীকার করছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান। তার মতে, মূলত বক্স কালভার্টের কারণেই এই জলাবদ্ধতা। আর রাজধানীর নিচু এলাকায় অবাধে অট্টালিকা গড়ে ওঠা।

রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের পাম্পগুলো নিয়ে ওয়াটার ডেভেলপমেন্টের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। আবার খালগুলো জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে। এখানে সমন্বিত সার্বিকতা নির্ভর, সময়নির্ভর কর্মধারা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সবশেষে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এটা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

Related posts

Leave a Comment