এম আরমান খান জয় গোপালগঞ্জ থেকে : ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবীতে কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুফতি হান্নানের লাশ যাতে কোটালীপাড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা না হয় সে উপলক্ষে হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুন্সী এবাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে তার বাড়িতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো: হান্নান ফকির, সংরক্ষিত নারী ২নং ওয়ার্ডের সদস্য শিখা বেগম, ইউনুস শেখ, বেল্লাল মোল্লা ও ইদ্রিস শেখ বক্তব্য রাখেন। সভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায়ে খুশি তার জন্মস্থান কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জের মানুষ। তারা চান ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সিকে একজন মৌলভী হিসেবেই চিনতেন ও জানতেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়াবাসী।
২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার জনসভায় বোমা পুতে রেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা করার পর জঙ্গি নেতা হিসেবে ওঠে আসে মুফতি হান্নানের নাম। জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায়ে খুশি তার জন্মস্থান কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জের মানুষ। তার চান ফাাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হোক। সেই সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামের মানুষের মধ্যে এই রায়কে কেন্দ্র করে উসকে উঠেছে ঘৃণা। তারা মনে করেন মুফতি হান্নান কোটালীপাড়াকে কলঙ্কিত করেছে। ফাঁসির মাধ্যমে তারা মুফতি হান্নান পর্বের অবসান চান। তাই ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর তার লাশ কোটালীপাড়ায় দাফন করার জন্য আনা হলে প্রতিহত করা হবে বলেও জানান এলাকাবাসী। এই জঘন্য ব্যক্তির লাশ কোটালীপাড়ার মাটিতে দাফনের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
কে এই জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি : জানা গেছে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে একজন সাদা-সিধে ধর্ম ভীরু মৌলভী হিসেবেই চিনতেন ও জানতেন গোপালগঞ্জবাসী। বিগত ২০০০ সালের ২২ জুলাই নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আয়োজন করা হয়। মাঠের পার্শের পুকুরে ভেসে ওঠা তারের সূত্র ধরে ২০ জুলাই সভাস্থল ও হ্যালিপ্যাডের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি ও দুদিন পর ২২ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে আরো একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা দুটি উদ্ধারের পর গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের সোনার বাংলা সাবান ফ্যাক্টারিতে অভিযান চালিয়ে আবিষ্কার করা হয় বোমা তৈরীর কারখানা। এই থেকে শুরু হয় জঙ্গি মুফতি হান্নানের পথ চলা। হুজি নামে জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর গীর্জা, রমনার বটমূলে ও সিলেটে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপরসহ নানা স্থানে চালায় বোমা হামলা। শুধু গোপালগঞ্জবাসীই নয় দেশবাসী জানতে পারে হুজি নেতা মুফতি হান্নানের নানা জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডের খবর। এ সব কর্মকান্ডে অনেকটা রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যায় সে। আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই জঙ্গি নেতা গ্রেপ্তার হবার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি কর্মকান্ড চালিয়েছে এমন নানা তথ্য উপাত্তও পুলিশের রেকর্ডে রয়েছে। এরপর ফাঁসির রায়কে কার্যকর নিয়ে আবারো আলোচনায় ওঠে আসেন তিনি।
মুফতি হান্নানের বাড়ির অবস্থা : জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান কখনোই গ্রামের বাড়ি কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামে আসতেন না। গ্রামের বাড়ি হিরণে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী। পুরো বাড়িটিই শুনশান নীরব। এলাকাবাসীও ভিড়ছে না বাড়ির কাছাকাছি। মুফতি হান্নানের চার সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করছেন স্ত্রী। তারা গ্রামের মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে যশোর কলেজের ছাত্র। ছোট ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে। তবে ছেলে মেয়েদের মধ্যে কে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও ক্লাসে পড়ে জানাতে পারেনি কেউ।
মুফতি হান্নানের মায়ের প্রতিক্রিয়া : ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত মুফতি হান্নানের মা রাবেয়া বেগম বলেছেন, আমার ছেলে মুফতি হান্নান সরকারের কাছে অপরাধী, আমার কাছে না। সরকার তাকে যে শাস্তি দেবে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের নিরাপরাধ মানুষগুলোকে যেন হয়রানি করা না হয়। আমার ছেলে মুফতি হান্নান কি কর্মকান্ড করেছে তা আমি জানি না। তবে আমার সামনে সে কখনো কোনো খারাপ কাজ করেনি।
মুফতি হান্নানের স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : মুফতি হান্নানের স্ত্রী রুমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি তার স্বামীর সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গ্রামবাসী ও এলাকাবাসীর দাবি : মুফতি হান্নানের লাশ যাতে কোটালীপাড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা না হয় সে উপলক্ষে হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুন্সী এবাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে তার বাড়িতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো: হান্নান ফকির, সংরক্ষিত নারী ২নং ওয়ার্ডের সদস্য শিখা বেগম, ইউনুস শেখ, বেল্লাল মোল্লা ও ইদ্রিস শেখ বক্তব্য রাখেন। সভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা বলেন, যে কোনো মূল্যে মুফতি হান্নানের লাশ এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। যে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। দেশকে বোমা আতঙ্কে পরিণত করেছিল। আমাদের সম্পদ বঙ্গ কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করেছিল, সেই কুলাঙ্গারের ঠাই কোটালীপাড়ার মাটিতে হবে না। যে কোনো অবস্থায় তা প্রতিহত করা হবে।
জনপ্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া : কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মুফতি হান্নান আমাদের কোটালীপাড়া তথা গোপালগঞ্জবাসীকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা দেশবাসীর কাছে অপরাধী হয়ে আছি। আদালত যে রায় ঘোষণা করেছে সেটি দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানাই। তাহলে আমরা কিছুটা হলেও দায় মুক্তি পাবো।
হিরণ ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি এবাদুল ইসলাম বলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সির লাশ কোনো ভাবেই কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামে দাফন করতে দেওয়া হবে না।
গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ১৪ নং ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম হাজরা মুন্নু বলেন, হান্নান মুন্সী বোমা মেরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তা ছাড়া বহু সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে দন্ডাদেশ জারি হয়েছে সেটার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
কোটালীপাড়া উপজেলার প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজিবুল হক বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জঙ্গি নেতা হান্নানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। আর এই কুখ্যাত ব্যক্তির লাশ যেন কোটালীপাড়ার ত্রি-সিমানায় না আনা হয়। আমরা হান্নানের লাশ প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে জাতির কাছে থেকে কিছুটা হলেও দায় মুক্তি পেতে চাই।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে সভা অনুষ্ঠিত
