আলোচিত ‘সেভেন মোমেন্টস’

মুক্তবার্তা ডেস্ক: ৪ আগস্ট রেকর্ড গড়ে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার। খুব অল্প সময়ে গোটা প্যারিসে ছড়িয়ে পড়ে নেইমারের জনপ্রিয়তা। মাঠের পারফর্মেও আলোকিত ছাপ রাখতে শুরু করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। দেখতে দেখতে পিএসজিতে ১০০দিন পূর্ণ করলেন নেইমার। এই অল্প সময়ে ভালো-খারাপ দুটাই দেখতে হয়েছে তাকে। যার মধ্যে মোটা দাগে সাতটি মুহূর্ত ছিল, যা কি-না বেশ আলোচিত।

প্রথম বক্তৃতা: প্যারিসের হাজারো দর্শকদের সামনে প্রথম বক্তব্য দেন নেইমার। তাকে সঙ্গ দেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) প্রেসিডেন্ট নাসির আল-খেলাফি। আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্বের প্রথম দিন নেইমার বলেন, ‘নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আমি পিএসজিতে এসেছি। আমি আমার দলের ইতিহাস গড়তে সহায়তা করব। তারকা হতে আসি নি।’ এরপর আইফেল টাওয়ারে নেইমারের আরকটা ‘উপস্থাপনা অনুষ্ঠান’ এর আয়োজন করে ফরাসিরা। সেখানেও সবার নজর কাঁড়া মন্তব্য করেন নেইমার জুনিয়র।

পিএসজি অভিষেক: আসার পর রিলিজ ক্লজ এবং কাগজপত্রের নানাবিধ ঝামেলা থাকায় দুই-একটা ম্যাচ পর নেইমারকে মাঠে নামায় পিএসজি। সে দিন সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে ফরাসিদের। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ গুইনগাম্পের বিপক্ষে দেখা মিলল ব্রাজিলিয়ান সেনসেশনকে। নিজের প্রথম ম্যাচেই আলো ছড়ান নেইমার। এক গোল নিজে করেন আর সতীর্থদের দুই গোলে অবদান রাখেন। জয় পায় জার্মেইন।

বার্সেলোনা বোর্ডের সমালোচনা: পিএসজির হয়ে দুই ম্যাচ খেলেই বার্সা বোর্ডের দিকে আঙ্গুল তোলেন নেইমার। কাতালান ক্লাবটির পরিচালকদের একেবারে ধুয়ে দেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। ‘বার্সেলোনার বোর্ড কর্তাদের আমার কিছুই বলার নেই। আমি ওদের ওপর অনেক হতাশ। আমি চার বছর ছিলাম, সেখানে ভালোই ছিলাম। ছাড়ার সময়েও ভালো ছিলাম। কিন্তু তাদের সঙ্গে হয়তো না। আমার মনে হয় তাদের দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। বার্সা আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আর সবাই সেটা জানে।’

নেইমার-কাভানি দ্বন্দ্ব: দেড় মাস যেতে না যেতেই শুরু হট্টগোল। সে দিন ফরাসি লিগে লিঁও’র বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পায় পিএসজি। যদিও দুটি গোলই আসে প্রতিপক্ষের ভুলে। ম্যাচ শেষে জয়কে আড়াল করে আলোচনার টেবিলে নেইমার-কাভানির কথা কাটাকাটি। পেনাল্টি শট কে নেবেন? এমন উত্তর মেলাতে দুই দফা তর্কাতর্কি হয় নেইমার-কাভানির মধ্যে।

প্রথম দফায় ম্যাচের ৫৭ মিনিটে পিএসজির হয়ে ফ্রি-কিক নিতে এগিয়ে আসেন কাভানি। কিন্তু নেইমারের স্বদেশী বন্ধু দানি আলভেজ বল নিয়ে বাড়িয়ে দেন নেইমারকে। ব্যাপারটি পছন্দ হয়নি কাভানির। বেশ রাগান্বিত হয়ে পড়েন এই উরুগুয়ে ফরোয়ার্ড। এরপর ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে পিএসজি পেনাল্টি পেলে আলভেজ চেয়েছিলেন নেইমার কিক নিক। কাভানি সেটিও হতে দেননি। নিজেই কিক নেন। এনিয়ে ত্রিমুখী তর্কে জড়ান কাভানি, আলভেজ ও নেইমার।

নেইমারের লাল কার্ড: ২৩ অক্টোবর মার্সেইয়ের খেলোয়াড়দের লক্ষ্যবস্তু যেন ছিল নেইমার। সবচেয়ে বেশি পাঁচবার ফাউলের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়ার সময়ও দুইবার ফাউলের শিকার হন বার্সেলোনার এই সাবেক তারকা। মেজাজ হারিয়ে লুকাস ওকাম্পোসকে ধাক্কা মারেন নেইমার। এরপরই রেফারির লাল কার্ড। মজার ব্যাপার হলো, রেফারির লাল কার্ড দেখে কোনো প্রকার রিঅ্যাকশন করেননি নেইমার। উল্টো যেন হাসিমুখে বরণ করলেন।

মেসি+নেইমার+সুয়ারেজ: মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে ক্যাম্প ন্যুতে চার বছর সময় কাটিয়েছেন নেইমার। কত স্মৃতি কতই সুন্দর ছিল বার্সার দিনগুলো। সাবেক বন্ধুদের নিয়ে যে বার্সেলোনা শহর দাপিয়ে বেড়াতেন নেইমার। তিনি এখন পিএসজির। তাতে কি অতীত ভুলে যাবেন নেইমার? মোটেও না। বন্ধুত্বের টানে হঠাৎ করেই বার্সেলোনায় বেড়াতে গেলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। সাবেক প্রিয় সতীর্থ লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, জেরার্ড পিকে এবং ইভান রাকিটিচের সঙ্গে ছুটিয়ে আড্ডা দেন নেইমার।

কাঁদলেন নেইমার: এডিনসন কাভানির সঙ্গে পেনাল্টি নিয়ে মাঠে ঝামেলা হয়েছিল নেইমারের, কোচ উনাই এমেরির সঙ্গেও নাকি ভালো যাচ্ছে না ব্রাজিলীয় তারকার। এই ঘটনার সত্যতা জানতে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচের পর এক সাংবাদিক নেইমারকে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে নেইমার বলেন, ‘আমি প্যারিসে বেশ ভালো আছি। সুখে আছি। আমার সঙ্গে কাভানির কোনো ঝামেলা নেই, কোচের সঙ্গেও না। আমি চাই এসব বানানো গল্প বন্ধ হোক। পিএসজিতে এসেছি ভালো কিছু করতে, দলে অবদান রাখতে, এসেছি আমার কোচকে সহায়তা করতে। আমি বাস্তববাদী একজন মানুষ, এসব গুজব একেবারে পছন্দ করি না।’ এ কথাগুলোর মাঝেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নেইমার। পরে ব্রাজিল কোচ তিতে সম্মেলনে অধিনায়কের পক্ষে কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত চোখের জল নিয়েই সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন নেইমার।

Related posts

Leave a Comment