মুক্তবার্তা ডেস্ক: দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রথম জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পীর প্রথম জানাজার নামাজ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ বেতারে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আব্দুল জব্বারের পরিবারের সদস্যসহ সংগীতাঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এরপর শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আব্দুল জব্বারের মরদেহ এখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন আব্দুল জব্বার। এরপর তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ভূতের গলিস্থ তার বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
জনপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্ট, প্রস্টেট ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি বিএসএমএমইউতে প্রায় তিন মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১ আগস্ট তাকে বিএসএমএমইউয়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গান গাওয়া শুরু ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন তিনি ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান।
চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন প্রথম ১৯৬৪ সালে। সে বছর জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’র গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এরপর ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ ছবিতে আলম খানের সুরে তার গাওয়া ‘ও..রে নীল দরিয়া’ গানটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা জোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অসংখ্য গানে কণ্ঠ দেন। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার হারমোনিয়াম নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে সেসময় বিভিন্ন সময় গণসংগীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি দান করেছিলেন।
সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮০ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।